Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বাংলাদেশে লিলিয়াম চাষ : বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

বাংলাদেশে লিলিয়াম চাষ : বাণিজ্যিক সম্ভাবনা
ড. ফারজানা নাসরীন খান১ আফরোজ নাজনীন২ কারিমাতুল আম্বিয়া৩
বর্তমান বিশে^ ফুল বাণিজ্যে লিলিজাতীয় ফুলের চাহিদা অনেক। কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে লিলির বেশ কয়েকটি প্রজাতির মধ্যে লিলিয়াম অন্যতম। লিলিয়াম লিলিয়েসি পরিবারভুক্ত একটি বর্ষজীবী কন্দ জাতীয় ফুল যাকে মূল লিলি  হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আন্তর্জাতিক কাট ফ্লাওয়ার বাণিজ্যে শীর্ষ ১০টি ফুলের মধ্যে এ ফুল ৪র্থ স্থান দখল করে আছে। লিলিয়ামের অন্যতম আকর্ষন এর বর্ণবৈচিত্র, দীর্ঘস্থায়িত্ব ও সুগন্ধ যা সৌন্দর্য বাড়াতে, বৈচিত্র্য আনতে ও পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূলতঃ দুধরনের লিলিয়াম পাওয়া যায়-এশিয়াটিক ও অরিয়েন্টাল লিলিয়াম। এশিয়াটিক লিলিয়াম গন্ধহীন কিন্তু বর্ণের বৈচিত্র অনেক বেশি এবং এর চাষাবাদ তুলনামূলকভাবে সহজ। অন্যদিকে অরিয়েন্টাল লিলিয়াম সুগন্ধযুক্ত, তুলনামূলকভাবে বেশি নি¤œ তাপমাত্রা পছন্দ করে। ব্যাপক চাহিদার জন্য পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে চীন থেকে এ ফুলটি অনেক দিন থেকেই এদেশে আমদানী হচ্ছে এবং উচ্চমূল্যে এদেশের ফুলপ্রেমীদের কাছে বিক্রি হচ্ছে। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত ফুলের সাথে সংযোজন হয়েছে লিলিয়াম নামক ফুলটির। অত্যন্ত আশার কথা যে, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটিতে স্বল্প পরিসরে বাণিজ্যিকভিত্তিতে লিলিয়ামের চাষ শুরু হয়েছে এবং অধিক মুনাফা অর্জনের দিক থেকে অন্যান্য ফুলের চেয়ে এটি বেশ লাভজনক।
এদেশে এ ফুলটির ব্যাপক চাহিদার কথা চিন্তা করে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফুল বিভাগের বিজ্ঞানীরা লিলিয়াম ফুলের উপর সর্বপ্রথম গবেষণা শুরু করেন। ২০১৭ সালে এনএটিপিয়ের অর্থায়নে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ফুল বিভাগ লিলিয়াম ফুলের বিভিন্ন জাত সংগ্রহ, মূল্যায়ন, বৈশিষ্ট্যকরণ ও কন্দ সংরক্ষণের উপর গবেষণা করে সফলতা লাভ করে যার ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে বারি লিলিয়াম-১ এবং বারি লিলিয়াম-২ নামে দু’টি লিলিয়ামের জাত অবমুক্ত করা হয়। বর্তমানে এ ফুলের দ্রুততম সময়ে ভালো মানের কন্দ উৎপাদনসহ বেশ কিছু উদ্দেশ্য নিয়ে বিশেষ করে কৃষক পর্যায়ে লিলিয়াম চাষ জনপ্রিয়করণ করার লক্ষ্যে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে যার মাধ্যমে ইতিমধ্যে ফুল চাষীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ বৎসরের শীত মৌসুমে  ঢাকা (সাভার), গাজীপুর, রংপুর এবং যশোরে প্রশিক্ষক ও কৃষকদের মাঝে এ ফুলের উৎপাদন কলাকৌশল, সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা, আপদ ব্যবস্থাপনা, বাল্ব/কন্দ উৎপাদন ও সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং বর্তমানে এসব স্থানে লিলিয়াম ফুলের উপর প্রদর্শনী চলমান রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে গত মৌসুমে প্রদর্শনীপ্রাপ্ত ফুলচাষিরা এ বৎসর পূর্ববর্তী বাল্ব/কন্দ ব্যবহার করে লিলিয়াম চাষ করছেন এবং আকর্ষনীয় মূল্যে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন যা ভবিষ্যত লিলিয়াম চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনারই ইঙ্গিত বহন করে।   
লিলিয়াম চাষের জন্য মৃদু আবহাওয়া প্রয়োজন। ভালো মানের ফুল উৎপাদনের জন্য দিনের তাপমাত্রা ২০-২৫০ সে. এবং রাতের তাপমাত্রা ১০-১৫০ সে. হওয়া বাঞ্ছনীয়। ৫০% আলো প্রতিরোধ করতে পারে এমন টঠ পলিথিন/এগ্রো শেড নেট ব্যবহার করলে ভালো মানের ফুল উৎপাদন করা যায়। তবে বর্তমানে অল্প দামের মশারী নেট ব্যবহার করেও লিলিয়াম চাষ করা যাচ্ছে। সুনিষ্কাশিত এবং পর্যাপ্ত জৈবসার সমৃদ্ধ বেলে  দো-আঁশ মাটি লিলিয়াম এর জন্য উপযোগী। সাধারণত এশিয়াটিক লিলিয়ামের জন্য মাটির ঢ়ঐ ৬-৭ এবং অরিয়েন্টাল লিলিয়ামের জন্য ঢ়ঐ ৫.৫-৬.৫ থাকা ভালো।
লিলিয়াম সাধারণত বাল্ব/কন্দের মাধ্যমে বংশবিস্তার করা হয়। উৎকৃষ্ট মানের কন্দ তৈরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আন্তর্জাতিক বাজারে যে কন্দ বিক্রি হয় তা সাধারণত টিস্যু কালচার পদ্ধতির মাধ্যমে উৎপাদন করা হয় যাতে ভাইরাসমুক্ত কন্দের মাধ্যমে ভালো মানের ফুল উৎপাদন করা সম্ভব হয় এবং বাণিজ্যিক চাষাবাদের জন্য এ পদ্ধতি সবচেয়ে উত্তম। এতে অল্প সময়ে প্রচুর সংখ্যক রোগমুক্ত কন্দ পাওয়া যায়। তাছাড়াও শল্ক (ঝপধষব), গুঁড়ি কন্দ (ইঁষনষবঃং), বুলবিল (ইঁষনরষং) ইত্যাদির মাধ্যমেও বাল্ব/কন্দ উৎপাদন করা সম্ভব। যদিও এক্ষেত্রে সময় কিছুটা বেশি প্রয়োজন হয়।
বাংলাদেশে অক্টোবর-ডিসেম্বর মাস লিলিয়াম বাল্ব লাগানোর উপযোগী সময়। রোপণ সময়ের তারতম্যের মাধ্যমে বেশি সময় ধরে ফুল পাওয়া যায় যার মাধ্যমে চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হতে পারেন। তাছাড়া একই সময়ে বেশি ফুল ফুটে গেলে বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হয় বলে ফুলের দাম বেশ কমে যায়। বড় (৩-৫ সেমি), পরিষ্কার এবং রোগমুক্ত কন্দ ১৫ সেমি ী ১৫ সেমি দূরত্বে এবং ১০-১২ সেমি গভীরে রোপণ করলে ভাল মানের ফুল পাওয়া যায়।
লিলিয়াম চাষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ কোকোডাষ্ট মিশাতে হবে যাতে জমির ২৫-৩০ সেমি নিচ পর্যন্ত কোকোডাস্ট পাওয়া যায়। কোকোডাস্ট ব্যবহারের ফলে মাটি ঝুরঝুরা থাকে এবং মাটিতে বাতাস চলাচল করতে পারে। লিলিয়াম জলাবদ্ধতা একদমই পছন্দ করে না এবং এ অবস্থায় বিভিন্ন রোগ জীবাণুর আক্রমণ হয়। ফলে সেচের বিষয়ে খুব সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত এবং বেড করে চাষ করা প্রয়োজন।
ভালো মানের লিলিয়াম ফুল উৎপাদনের জন্য সঠিক পরিমাণ সারের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা জলবায়ূ, মাটির প্রকৃতি, সেচ প্র্রয়োগ পদ্ধতি, জাত, বাল্বের আকার ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। ভালো ফলন পেতে হলে লিলিয়ামের জমিতে বেশি পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। লিলিয়াম কন্দজ ফুল হওয়ায় এর কন্দের মধ্যেই অধিকাংশ পুষ্টি উপাদান সঞ্চিত থাকে। তাই কন্দ রোপণের প্রথম ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত মাটিতে কোন সার প্রয়োগ না করাই ভাল। কন্দ রোপণের প্রথম ৩ সপ্তাহ পর ঘচক ৩০:২০:২০ গ্রাম/প্রতি বর্গ মিটারে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। পরবর্তী ৩ সপ্তাহ পর প্রতি ১০০ বর্গ মিটারে ১ কেজি ক্যালসিয়াম নাইট্রেট এবং ৬ সপ্তাহ পর প্রতি ১০০ বর্গ মিটারে ১ কেজি পটাসিয়াম নাইট্রেট প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। নাইট্রোজেনের অভাব দেখা দিলে ফুল কাটার ৩ সপ্তাহ পূর্বে প্রতি ১০০ বর্গমিটারে ১ কেজি পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উপরিপ্রয়োগ করা যেতে পারে। বাণিজ্যিক লিলিয়াম চাষে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ নাইলনের তৈরি সাপোর্টিং নেট দেয়া যাতে গাছ লম্বা হয়ে হেলে না যায়। গাছের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির সাথে সাথে সাপোর্টিং নেটকেও উপরে উঠিয়ে দিতে হবে।
জাতভেদে বাল্ব/কন্দ রোপণের ৬০-৯০দিন পরে ফুল সংগ্রহের উপযোগী হয়। স্টিকের নিচের দিকের ২-৩টি ফ্লোরেটে হালকা রং দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ফুল সংগ্রহ করা উচিত। ফুল পুরোপুরি ফোটার পর ফুল সংগ্রহ করলে পরিবহনের সময় ফুল নষ্ট হয়ে যায়। মাটির নিচে বাল্বের যথোপযুক্ত বৃদ্ধির জন্য ভূমি থেকে স্টিকের ১০-১২ সেমি উপরে কাটতে হবে।
গাছে ফুল দেয়া শেষ হলে ভালো মানের বাল্ব তৈরির জন্য বাল্বকে ৬-৭ সপ্তাহ মাটিতে রেখে দিতে হবে। বিশেষ করে যখন পরিত্যক্ত কা- শুকিয়ে যায় তখনই বাল্ব তোলার উপযুক্ত সময়। মাটি থেকে শুকনো কা-সহ কন্দ এমনভাবে তুলতে হবে যাতে কন্দ কোনভাবেই আঘাত প্রাপ্ত না হয়। উত্তোলনের পর বড়, রোগমুক্ত, ভালো কন্দসমূহকে সংরক্ষণের জন্য বাছাই করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে অটোস্টিনে (২ গ্রাম/লিটার পানি) শোধন করে ছায়ায় শুকাতে হবে। বাল্ব/কন্দ সংরক্ষণের জন্য কোল্ডস্টোরেজের সুবিধা থাকতে হবে। শুকানোর পরপরই কন্দ প্লাষ্টিক ক্রেটে আর্দ্র কোকোডাস্ট/কাঠের গুড়া/কোকোডাস্ট ও কাঠের গুড়া -এ রেখে কোল্ডস্টোরেজে ২-৩ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় ৬-৮ সপ্তাহ সংরক্ষণ করতে হবে। বেশিদিন সংরক্ষণ করতে হলে উক্ত তাপমাত্রায় ২ সপ্তাহ রেখে পরবর্তীতে -১ ডিগ্রি সে. এ রাখা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে বাণিজ্যিক লিলিয়াম চাষের প্রধান অন্তরায় ভালো মানের কন্দ উৎপাদন ও সংরক্ষণের সুবিধার অভাব। তাই কন্দ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় যাতে প্রচুর সময় এবং অর্থের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া কন্দ আমদানির জন্য এলসি বিষয়ক জটিলতার জন্য সময়মতো কন্দ আমদানি করা সম্ভব হয় না। যেহেতু বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটিতে সাফল্যজনকভাবে লিলিয়াম চাষ হচ্ছে এবং অধিক মুনাফা অর্জনের দিক থেকে অন্যান্য ফুলের চেয়ে এটি বেশ লাভজনক। সর্বোপরি এদেশে এ ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে তাই গবেষণার পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হলে দেশেই ভালো মানের কন্দ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা সম্ভব। ফলে এদেশে বাণিজ্যিক লিলিয়াম চাষ সম্প্রসারিত হবে এবং বাজার চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে এবং সেই সাথে লিলিয়াম কন্দ ও ফুল আমদানি অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

লেখক : ১পিএসও, ২-৩এসও, ফুল বিভাগ, উগকে, বিএআরআই, গাজীপুর, মোবাইল : ০১৯১০০৪৭১৯১, ই-মেইল : kham_farjana@yahoo.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon